কিছু কথা কিছু স্মৃতি অজান্তেই মনের মুধ্যে এসে
হোঁচট খায় ।অনেক চেষ্টা করে ভুলে থাকতে চাইলেও
বাস্তবতায় সে বিষয়গুলো ঘুরে ফিরে আসে। অতীতের
সেই বিষয়গুলো আজও মনকে কুকড়িয়ে দেয় করে তোলে হতাশাছন্ন। মনে হয় প্রকৃতির কাছে আমরা কত
অসহায় ।সেই সময় কত উদ্দাম ছিল মনে ,ছিল কত স্বপ্ন ।সবার
ছিল একেক রকম উচ্চাভিলাসী চিন্তন। তার-ই মাঝে কখনও কখনও কিছু বন্ধুর
সাথে পারিবারিক সুখ-দুখের
বিষয় নিয়েও আলোচনা হত। কাহারও গল্প শুনে তাৎক্ষণিকভাবে
কালবৈশাখী ঝরের রুপ নেয়া মুকখানি ঢাকতে চুরুটের ধোয়া বেশি করে ছেড়ে দিত ।সে রকম রুমন
ছিল বেশ হাশি-খুশি মেজাজের অন্তরালে কষ্ট সহ্য করা ছেলে ।
কিন্তু সেটা বেশিদিন আটকে রাখতে পারত না। তার
সকল বিষয়গুলো সব বন্ধু সাথে শেয়ার না করলে সে শান্তি-ই পেত না। কখনও
দুঃখজনক বিষয় চেপে রাখতে চাইত ,বিষেশ করে যখন অরুন সামনাসামনি
থাকত ।
অরুনও সেগুলো শুনতে চাইত না । কারণ তাতে যদি তার দুঃখ বেরে
যায় সেই ভয়ে। আর অরুণ ছিল কিছুটা চঞ্চল গোছের সেই কারনে
সেও অনেক বিষয় লুকাতো ।কিন্তু রুমন সেরকম গোছের ছেলে
নয়,
তার দুঃখের কথাগুলো বেশিক্ষণ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারত না। এমনিভাবে যে অনেক সময় কেটে গেছে তা আমরা কেউ বুজতে পারিনি ।
তখন ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা সবে মাত্র শেষ ।বাবার অসুস্থতার কারণে বাড়ি চলে আসি। বাবার অসুস্থতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ার
কারনে সেখানে আর নিয়মিত হওয়া সম্ভব হয়নি ।মাঝে
মাঝে গিয়ে সেখানে দু একদিনের জন্য থাকা ।এই
অল্প সময়ের মাঝে অনকের সাথে দেখাই হত না ।বাড়িতে
সমস্যা আর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হয়ার কারনে খুবই খারাপ লাগত। কিন্তু
করার কিছুই ছিল না ।এরই মাঝে হঠাত একদিন শুনলাম রুমন
অসুস্থ । তার
শরীরের একটি জায়গায় টিউমার সন্ধান পাওয়া গেছে ।এর মাঝে আবার অপারেশনের কাজও শেষ করেছে । খানিকটা সুস্থ হতেই জীবনের তাগিদে
একটি কর্মস্থলে যোগদিয়েছে ।এর মাঝে
ফোনে দু-একবার কথা হয়েছে তার সঙ্গে ।
কিছুদিন
পরে আবার শুনতে পেলাম সে আবার অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ।আবার ফোনে জানতে পারি তার পায়ে টিউমার আক্রান্ত । এবারেও অপারেশ্অন করতে হবে ।সে এবার কান্নাজড়িত কন্ঠে আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারল
না । যে বন্ধুটি একদিন আমার
বাবার অসুস্থতার খোজখবর নিত ,আজ সে নিজেই ভারসাম্যহীন ।ভাবতে
কষ্ট লাগে ।কিছুক্ষণপর অরুনের ফোন পেলাম
। অরুনের কাছে হতাশার কথা প্রকাশ
করেছে এবং সে বাচতে চায় ।কিন্তু এরই মাঝে পিতৃহীন বন্ধুটি
সব সহায় সম্বল শেষ করেছে । জানতে
পারলাম অরুনের কাছ থেকে ।
শুনে
ভাবতে লাগলাম ছোটবেলায় হারিয়েছে তার পিতাকে ,আপনজন বলতে এ পৃথিবীতে
শুধু তার মা। তার মা একাই কি করবে এটাই ভাবছি। তাছাড়া
তার শেষ সম্বল পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে। ভাবতে
কষ্ট লাগে তার অভাগী মায়ের কথা চিন্তা করে। এটা
উপলব্ধি করতে পারলাম যে দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের জীবন দুঃখেই অতিবাহিত হয়। কিছু
মানুষ এর পরিবর্তণ ঘটাতে পারলেও অধিকাংশ মানুষই পারে না।
তাই সময় নষ্ট না করে অরুনসহ আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে
তার চিকিতষার জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমে পড়লাম। টানা কয়েকদিন শ্রম দিয়ে বেশ কিছু
অর্থ সংগ্রহ করে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হলেও তার মায়ের মুখের দিকে তাকাতে
পারেনি কেহ।
তার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চিকিতষা সেবার
ফলে সে কিছুটা সুস্থ।কিন্তু তাকে কেমোথেরাপি
দেওয়া লাগত।এর মধ্যে দেখা হলে তার মুখে থাকত যন্ত্রনাদগ্ধ সময় পারের কথা। অরুন
সর্বদা তাকে আশ্বস্থ্য করত যত যন্ত্রনা হোক দোস্ত তুই পুরো সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে
ফিরে আয়। আমরাও একটু স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতাম ।
কিন্তু আমাদের সবার অজানা ছিল যে, প্রদীপ নিভে
যাবার সময় জ্বলে ওঠে। এবার তার মায়ের কান্না আর কে থামাবে। তিন মাসপর হঠাত শুনতে
পেলাম ক্যান্সারের কারনে তার একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে ।ফোনে কথা হল রুমনের সাথে,তার চরম অসহায়ত্বে দু-জন বেশিক্ষণ
কথা বলতে পারলাম না।সিদ্ধান্ত নিলাম ওর বাড়িতে গিয়ে দেখে আসব। পরে অরুনের সঙ্গে
ফোনে কথা বলতে গিয়ে জানতে পারলাম সেও একটা পারিবারিক সমস্যায় পরেছে । তাই দুদিন সময় পিছিয়ে নিলাম ।
এক সপ্তাহ পর তার একটা মিসড কল পাওয়ার পর কল
ব্যাক করলাম।ফোন এসেছিল কোথাও চাপে পড়ে।
তার শেষ কথা ছিল দোস্ত আমি প্যারালাইসড হয়ে গেছি ।তোর সাথে পরে কথা হবে। আর ফোনে
কথা হয়নি । কথাটি শুনে আমার সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল।
কিছুদিন পর অরুন কাছে জানতে পারলাম সে আর নেই।
অভাগী মাতার তিলে তিলে গড়া সেই জীবন নদীর কিণারায়
এসেও ভিড়তে পারল না।.....................
0 Comments