নীরস কথা




 গত কয়েক দিন বৃষ্টির কারণে বাড়ির বাইরে বের হতে পারিনি বন্ধীদশায় কেটেছে জীবনটা   এটা সাধরণত বাড়িতে থেকেই যদি হয় তাহলে কয়েদিদের দিনকাল কেমন কাটতে পারে ,ভাবতে কঠিন লাগে। যখন বাইরে বের হলাম আকাশ ছিল মেঘাছন্ন ,আবহাওয়াটা ছিল যেন কেমন নিজেকে রোগা রোগা মনে হচ্ছিল মনে হয় যেন কতদিন থেকে বাড়ির বাইরে ছিলাম , সবকিছুকে নতুন নতুন মনে হছে। অনিচ্ছা সত্তেও সামনে পা বাড়ালাম ,কিছুদুর হাটতে হাটতে কিছুটা নিজেকে মুক্ত-সতেজ মনে করলাম ।কয়েকজনের সাথে দেখা হল সবারি একই অবস্থা। মনে হল প্রকৃতি আর মানব মনের সাথে অপূর্ব মিল আছে। কিন্তু দুরন্ত মাছুয়া ছেলেদের দেখলে অন্যরকম মনে হয়। তাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি এরকম কোন জড়তার ধারধারে না ভাবলাম জড়তা শুধু অলসদের জন্য
 তবে কয়েকদিন পর কয়েকজনের সাথে দেখা হওয়ায় বিভিন্নজনের জমানো গল্প আর আলসেমির আড্ডাতে অনেকখানি সময় যে পেরিয়ে গেছে বুজতে পারিনি।  এর মধ্যে এক দাদুর মুখে  একটি গল্প শুনে আরও কিছুটা সময় কেমন করে যে কেটে গেল বুঝতে পারলাম না ।দাদার বন্ধু গিয়েছিল বাজারে কিছু খরচাপাতি করার জন্য। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখে তারাতারি খরচ শেষ করে বাড়ির উদ্যেশে বের হল। কিন্তু পথে বৃষ্টি তাকে আশ্রয় খুজতে বাধ্য করল। অনেক খোজাখুজি করার পর কোন আশ্রয় না পেয়ে ঝোপ-ঝার যুক্ত গাছের তলাকে বেছে নিল। কিন্তু বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আরও নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন।
তাই খুজতে লাগল খুজতে খুজতে গাছের নিচে ঝোপের পাশে একটা গুহার মত দেখতে পেল,সেখানে পানি পড়ছেনা তাই সেখানে গিয়ে ব্যাগটি পাশে নিয়ে ও হাটুরে লাঠি হাতে নিয়ে বসে পড়ল লাঠিটি হাতে খাড়া অবস্থায় রেখে দুপায়ে ভর দিয়ে বসে পড়ল অনবরত বৃষ্টি আর বজ্রপাতের শব্দে কিছুটা ভয় পেয়েছিল তার উপর বৃষ্টিতে ব্জ্রপাত  ছাড়াও আরও যে মহাবিপদ  অপেক্ষা  করছিল তা সে ঘূর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি বৃষ্টি শেষে বাড়ি ফেরার পালা এবার। তাই জঙ্গলাকীর্ণ গুহা থেকে বের হয়ে আসার সময় তার ব্যাগটি নিতে পারলেও লাঠিটি সরাতে পারছিলেন না।
লাঠি ছাড়াবেরিয়ে এসে বুজতে পারলেন লাঠিটা তাকে ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। সেই গুহা ছিল কোন অজগর সাপের আহার গ্রহণ করার হা-করা বিশাল আকৃতির মুখ সেখানেই বসে ছিল সে আর দাঁড় করানো লাঠির কারনে অজগরটি তার মুখ চাপতে পারেনি।কারণ লাঠির উভয় প্রান্তে চোখা(তীক্ষ্ণ)করা ছিল তাই বেচে গিয়ে দ্রুত সেখান থেকে ছুঠে পালালো। লাঠি দ্বারাই সেদিন সেই লোকের প্রাণ রক্ষা হয়েছিল গল্পটি শুনে কিছুক্ষণ ভাবলাম যে  মানবজীবনের বাস্তবতায় এমনি ঘটনাগুলো অহরহ ঘটে থাকে এখানে বৃষ্টি আর তর্জন-গর্জন গুলো মানুষ দ্বারাই ঘটে থাকে আর অজগর সমাজের মধ্যেই প্রবল প্রতাপশালী ব্যক্তি ওতপেতে হা করে আছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারনে অনেক সহজ সরল মানুষ এভাবেই কোন বর্বর প্রতাপশালী দোপায়া জানোয়ারের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয় কারও সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সাধ্য থাকলেও অনেকেরই তা থাকে না তাই জীবনের মায়া-মোহ ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় জীবনকে বলি দিতে হয়
আমরা দৃশ্য দেখতে দেখতে আজ অভ্যস্ত কিন্তু যে ব্যক্তি এই অজগর নামক কোন বর্বরের মুখে পড়েছে সেই ব্যক্তিই শুধু জানে তার জ্বালা
এমনি অসহায় এক পরিবারের মেয়ে রুপা বালা ।আর দশটা মেয়ের মত সেও কানামাছি ,গোল্লাছুট,এলোচুলে হৈ-হুল্লোর করে বেড়ানোর মত সময় তার ।চলছিলও সেভাবেই । কিন্তু হঠাত করেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার সেই ত্রয়োদশীর উপর চোখ পড়ে ৪৫বছর বয়সী প্রভাবশালী লম্পট গবু মিয়ার। গবু মিয়ার কথায় সেই এলাকায় আইন তাই অনেকে তাকে পছন্দ না করলেও নিজের নিরাপত্তা জন্য সালামটুকু দেয় আবার কিছু লোভী সার্থানেষী তার ভক্ত এমনি একজন স্কুলের ধর্ম শিক্ষক ভুলু মুন্সী গবু মিয়া তার লালসা চরিতার্থ করার জন্য হাত করে ভুলু মুনশীকে ।
ভুলু সদা তৎপর । গবু মিয়ার একেকটা কথাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য। ভুলুর চরিত্রও কোন অংশেও গবু মিয়ার চেয়ে কম নয়। ভুলুকে একবার বাঁচিয়ে ছিল গবু ।তাই ভুলু প্রয়োজনে তার আপনজনকেও গবুর হাতে তুলে দিতেও কার্পণ্য করে না
অথচ এই দুই চরিত্রহীনই সমাজে পুজনীয়। কিন্তু কেন ? কারন আমাদের হিংসা আরনৈতিকতাকে জীবন পরিচালনার চাবি হিসেবে মেনে নিয়েছি গবুর কথা অনুযায়ী এই নাবালিকাকে পৌছে দেয় গবুর কাছে। তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর অসুস্থ অবস্থায় নাবালিকাকে বাড়িতে রেখে যায় গবু । তা দেখে অসহায় দরিদ্র পিতা হার্ট এটাকে মুক্তি লাভ করে । পরিবারের অন্যান্য সদস্য নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । আত্মহত্যায় পরিশুদ্ধ করে নিজের জীবনকে রুপা বালা।
কিন্তু গবু মিয়াদের কিচ্ছু যায় আসে না তাতে। আর যায়-আসে-না আমাদের মুখোশধারী সমাজ-ব্যবস্থার লোকদেরযখন আবার দেখা যায় গরু মিয়া এক প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির পদে ?
এই অবস্থা দেখে কিছু হৃদয়বানের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হলেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার অধিকাংশ লোকের কিছুই যায় আসেনা .........  

Post a Comment

0 Comments