বাংলা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ বিভিন্ন উপায়ে গঠিত হয়েছে । এগুলোর মধ্যে সমাস ,সন্ধি ,উপসর্গ ,অনুসর্গ , প্রত্যয় সাধিত হয়ে শব্দ গঠন ।
মূলত শব্দমূল বা প্রকৃতির সঙ্গে
প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে । এটি একটি শব্দ গঠনের অন্যতম পদ্ধতি ।
ক্রিয়াপদের মূল শব্দকে বলা হয় ক্রিয়ামূল বা ধাতু । যেমনঃ ‘বল’ । এটি নিজেই একটি ক্রিয়াপদ । আবার এর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়াটির রুপ পরিবর্তিত হতে পারে । যেমনঃ বলেন,বলেছি,বলেছিলাম, বলুন
ইত্যাদি ।
বাংলা ব্যাকরণে ধাতুকে চিহ্নিত করার জন্য
(√)চিহ্ন
ব্যবহার করা হয় । একে বলা হয় ধাতু চিহ্ন । অর্থাৎ √বল মানে ‘বল’ ধাতু ।
সাধিত
শব্দঃ
মৌলিক শব্দ ছাড়া অন্যসব শব্দকে সাধিত
শব্দ বলে। যেমন :
হাতা, গরমিল, দম্পতি ইত্যাদি। অর্থাত মৌলিক শব্দের সঙ্গে বিভক্তি বা প্রত্যয় যুক্ত
হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয় । সাধিত শব্দ দুই
প্রকার। যেমন :
নামশব্দ ও ক্রিয়া।
- প্রত্যেকটি সাধিত শব্দ বা নামশব্দের ও ক্রিয়ার দুটি অংশ থাকে। যেমন :
কোনো শব্দের মূল অংশকে যখন আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশকে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে । যেমন , পড়ুয়া এর মূল 'পড়'কে ভাঙ্গা যায়না । অতএব 'পড় ' হচ্ছে প্রকৃতি । কিন্তু মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি
বলা যায় না । যখন কোন মূল শব্দের সংগে কোন অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে
নতুন শব্দ গঠন করে ,তখন সেই শব্দের মূল শব্দকে প্রকৃতি বলে.
। প্রকৃতি দুই প্রকার ।
। প্রকৃতি দুই প্রকার ।
অর্থাৎ প্রত্যয় সাধিত শব্দের
মূলশব্দকে বলা হয় প্রকৃতি । কিন্তু প্রত্যয় সরিয়ে নিলে ,সেটি আর প্রকৃতি হয় না ।
- নাম প্রকৃতিঃ লাজুক, ফুলেল , মুখর - এ শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই -
লাজ +উক =লাজুক
ফুল+এল=ফুলেল (ফুলজাত) ও
মুখ+র = মুখর (বাচাল)। লাজ , ফুল ও মুখ ইত্যাদি শব্দকে বলা হয়
প্রকৃতি বা মূল অংশ। এগুলোর নাম প্রকৃতি ।
কিন্তু লাজ , ফুল ও মুখ এই শব্দকে
আলাদা ভাবে প্রকাশ করলে ,তখন স্রেফ মৌলিক শব্দ ।
- ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুঃ আবার নাচুনে ,জিতা চলন্ত , জমা ও লিখিত-শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই –
নাচ+উনে
=নাচুনে
জিত+আ
=জিতা
চল্+অন্ত=চলন্ত
জম্ +আ= জমা ও
লিখ্+ইত= লিখিত (যা লেখা হয়েছে) । এখানে নাচ, জিত, চল্ , জম্ ও লিখ্ এগুলো ক্রিয়ামূল
বা ক্রিয়ার মূল অংশ । এদের বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু ।
শব্দ গঠনের লক্ষে শব্দের নাম প্রকৃতি বা ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় , তাকেই
প্রত্যয় বলে। কয়েকটি শব্দের প্রকৃতি ও
প্রত্যয় বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো :
- নাম প্রকৃতি প্রত্যয় প্রত্যয়ান্ত শব্দ
জিত+আ
=জিতা
হাত + ল = হাতল
ফুল + এল = ফুলেল
ঘর +আমি =ঘরামি
(এখানে আ,ল,এল,আমি এই শব্দাংশগুলো প্রত্যয় )।
ক্রিয়া প্রকৃতি প্রত্যয়ান্ত শব্দঃ
চল্ + অন্ত = চলন্ত
গম +অন =গমন
পড় +উয়া =পড়ুয়া
জম্ + আ = জমা (এখানে অন্ত ,অন , উয়া ,আ এই শব্দাংশ গুলো কৃত প্রত্যয় )।
- বাংলা শব্দ গঠনে দুই প্রকার প্রত্যয় পাওয়া যায়। যেমন : তদ্ধিত প্রত্যয় ও কৃৎপ্রত্যয়।
১। তদ্ধিত
প্রত্যয়ঃ
শব্দমূল
বা নাম শব্দের সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় সেটি তদ্ধিত প্রত্যয় । যেমন : ঘরামি , ফুলেল ও
মুখর শব্দের যথাক্রমে আমি , এল ও র তদ্ধিত প্রত্যয়।
২। কৃৎপ্রত্যয়ঃ
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত
হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় সেটি কৃৎপ্রত্যয়। যেমন : বাড়ন্ত,গমন, চলন্ত,
জমা ও লিখিত শব্দের যথাক্রমে অন্ত,অন
, অন্ত, আ ও ইত কৃৎপ্রত্যয়।
৩। তদ্ধিতান্ত
শব্দঃ
তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয়
তদ্ধিতান্ত শব্দ। যেমন :
হাতল, ফুলেল , মুখর , ঘরামি ইত্যাদি ।
৪। কৃদন্ত
শব্দঃ
কৃৎপ্রত্যয়
সাধিত শব্দকে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ। যেমন : চলন্ত, জমা ও লিখিত, বাড়ন্ত , গমন ইত্যাদি ।
বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে ।
নামপদের যে অংশকে বিশ্লেষন বা ভাঞগা যায় না ,
তাকেই প্রাতিপদিক বলে । যেমন : হাত, বই, কলম ইত্যাদি (এই শব্দগুলোর কোন বিভক্তি নেই ) আবার
হাতের সংগে আ
যুক্ত হলে হয় হাতা এটিও একটি নাম শব্দ এবং প্রাতিপদিক ।
বিঃদ্রঃ বিভিন্ন ব্যাকরণ বই , সাইট থেকে সংগৃহিত
বিঃদ্রঃ বিভিন্ন ব্যাকরণ বই , সাইট থেকে সংগৃহিত
0 Comments